জন্মদিনে ‘শচীনে’র জন্য আক্ষেপ ভারতের

জন্মদিনে ‘শচীনে’র জন্য আক্ষেপ ভারতের

আজ ২৪ এপ্রিল, শচীন টেন্ডুলকারের জন্মদিন! জীবনের ৪৮ বসন্ত পার করে ৪৯ এ পা দিলেন বিশ্ব ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি ব্যাটার। কয়েকদিন আগে আইপিএলে ধারাভাষ্যের সময় হর্ষ ভোগলের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, নিজের বয়স আর রানসংখ্যা মনে রাখেন না তিনি। এই একটি বিষয়ই যেন তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে চেনায়, একজন শচীন টেন্ডুলকারকে তো আর শুধু বয়স আর পরিসংখ্যান দিয়ে মাপা যায় না। তিনি এসবের ধার ধারবেন কেন!

খেলা ছেড়ে দিয়েছেন প্রায় এক দশক হতে চলল, এরপর ভারতীয় ক্রিকেট আকাশে অনেক তারার উদয় এবং পতন হয়েছে, কিন্তু আরেকজন শচীনকে কি এখনো পেয়েছে দেশটি? ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার দীর্ঘ সময় পরও তাই মাঠে শচীনের এক ঝলক দেখলে এখনো সমর্থকরা ‘শচীন, শচীন’ বলে আওয়াজ তোলেন। শচীনের মতো ক্ষণজন্মা প্রতিভার আসলে কোন বিকল্প হয় না, হতে পারে না।

ভারতীয় ক্রিকেটে কখনো কিংবদন্তি চরিত্রের অভাব ছিল না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আঙ্গিনায় পঙ্কজ রায়, ভিনু মাঁকড়দের দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম পরিচিতি। এরপর মনসুর আলি খান পতৌদির ভারত বিশ্বজুড়ে তাদের দাপট দেখিয়েছে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, সর্বত্রই ছিল পতৌদির দলের জয়জয়কার। তারপর সুনীল গাভাস্কার-কপিল দেবরা ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিলেন।

হিসেবের বাইরে থাকা একটা দলকে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে মূল্যবান পুরস্কার জিতিয়ে কপিল দেব নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। ২২ গজে আগুন ঝড়ানো উইন্ডিজ, ইংল্যান্ডের গতি তারকাদের হেলমেট ছাড়াই সুনীল গাভাস্কারের মোকাবিলার গল্প তো রূপকথার রসদ।

ভারত যখন বিশ্বে একটা সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে গেছে প্রায়, তখনই আবির্ভাব হয় শচীন টেন্ডুলকারের। শুরুতেই ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান নামের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তিনি। ওয়াসিম-ওয়াকার দুর্দান্তভাবে সামলেছিলেন তখন, দ্রুতই নিজেকে দলের ব্যাটিংয়ে এক নির্ভরযোগ্য নাম হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। এরপর সময় যত গড়িয়েছে নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছেন, গল্পটা হয়েছে শুধুই রান আর রেকর্ডের। রেকর্ড বইয়ের অনেক পাতা ওলটপালট করে দিয়ে, অনন্য সাধারণ সব কীর্তি গড়ে যখন ক্রিকেট ব্যাট তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি, ততদিনে নিজেকে এমন উচ্চতায় তুলেছেন, যেখানে হয়ত তাকে ছোঁয়া অন্য কারও পক্ষে অসম্ভব।

২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমন হয় বিরাট কোহলির। জাতীয় দলে আসার আগেই ভারতকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতিয়ে তিনি তখন আলোচনার তুঙ্গে। শচীনের মতো ফুটওয়ার্ক, শটের ঝুলি, স্ট্রেট ড্রাইভ– এসব সাদৃশ্য আর ধারাবাহিকতার কারণে একসময় বেশ জোরেশোরেই তার সাথে শচীনের তুলনা শুরু হয়ে যায়। শচীন ক্রিকেট ছেড়ে দিলে যারা আর ভারতের খেলা দেখবেন না বলে পণ করেছিলেন, তারাও কোহলিকে নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন।

শুরুতেই বলেছি, নিছক কিছু সংখ্যা দিয়ে শচীনের মহিমাকে পরিমাপ করা যায় না। তেমনিভাবে শুধু ব্যাটে রানের ফুলঝুরি ছুটিয়ে, পরিসংখ্যানের জোরে তো আর শচীন হওয়া যায় না। মাঠে শচীন যেমন ছিলেন শান্ত, ধীরস্থির– কোহলি যেন বাস করেন ঠিক তার উল্টো মেরুতে। নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে, রগচটা স্বভাবের জন্য কোহলি বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন। সেজন্যই একটা সময়ের শচীনের সঙ্গে কোহলির তুলনা টানা আপনিতেই কমে যায়।

কোহলির পর আরও দুজনের সঙ্গে ভারতীয় মিডিয়া শচীনের কিছু মিল খুঁজে পেয়েছিল। যেমন স্বভাবের দিক দিয়ে ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে শচীনের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়, একই রকম নম্র-ভদ্র আচার-ব্যবহার দুজনের, মাঠে মাথা ঠাণ্ডা রাখার ক্ষেত্রেও দুজনই পারদর্শী। তবে মিডল অর্ডার ব্যাটার হওয়ার কারণেই কিনা, পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে এই দুইজনের তুলনা একেবারেই খাটে না।

কোহলি-ধোনির পর আরও একজনের সঙ্গে শচীনের মিল খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। ভারতের এই প্রজন্মের টপ অর্ডার ব্যাটার পৃথ্বী শ’র সঙ্গে শচীনের উচ্চতা এবং কপিবুক কাভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভের মিলের কারণে টানা হয়েছিল তুলনা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেকেই শতক হাঁকানো এই ব্যাটার এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসা এক নাম। জাতীয় দল থেকে অনেক দূরে এখন তিনি, আইপিএলে খেলছেন দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে, তবে সেখানেও তিনি অধারাবাহিক। শচীনের সঙ্গে তার ছোটখাটো মিল খুঁজে পাওয়ারা এখন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন।

বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ক্রিকেটারদের মাঝে শচীনকে খোঁজার চেষ্টা করেছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। উঠতি প্রতিভাদের মাঝে ‘আগামীর শচীন’ তকমা পাওয়ার সংখ্যাও নেহায়তে কম না। তবে সবদিক বিচার করে একটা কথা হলফ করে বলা যায়, ভারতীয় ক্রিকেট কিংবা আরও বৃহত্তরভাবে বিশ্ব ক্রিকেট আরেকটা শচীন হয়ত কখনোই পাবে না। ক্ষণজন্মাদের ধাতই হয়ত এমন, তাদের বিকল্প খোঁজার চেষ্টা বৃথা।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন